রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গেল একমাস আগেও তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে ক্ষতি কেটে না উঠতেই দেখা দিয়েছে আবার তীব্র নদীভাঙন। ভাঙনের কবলে পড়ছে নদীপারের হাজার হাজার মানুষ।
গত দুই বছরে তিস্তা নদীর নিচু এলাকার ২০টি পয়েন্টে তীব্র ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ ও শতাধিক পরিবার।
প্রতিদিন নতুন নতুন স্থানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। তবে আগ থেকেই এসব স্থান থেকে বসতবাড়ি ও গবাদিপুশু সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কখনো পানি বৃদ্ধি ও কখনো কম হওয়ায় ২০টি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দেয়। ফলে বিপাকে পড়ছে নদীপারের হাজার হাজার মানুষ।
কয়েক দিন ধরে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিনে তিস্তায় পানি কমতে থাকলেও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ২০ থেকে ২২টি পরিবারের ঘরবাড়ি ও কয়েক শ একর ফসলি জমি।
রংপুরের গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা বাঁধ থেকে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পূর্ব ইচলিগ্রাম ও শংকরদহ গ্রাম পর্যন্ত তিস্তার তীরবর্তী দুই কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে বলে দাবি করছে স্থানীয়রা। প্রতিদিনই তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত একর জমির ফসল। এর আগে বৃষ্টির পানি ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রংপুরের তিন উপজেলার বেশ কয়েকটি পুকুরের মাছ।
স্থানীয় আয়শা, শোপালী, মুকুলসহ আরো অনেকে জানান, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। ফলে তাদের বাড়িঘর, চলাচলের রাস্তা ও ফসল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বসবাসের ঘরটুকুও নেই তাদের। আবার পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঝেমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে দায়সারা সংস্কারের কাজ করছে।
প্রতিদিন ভাঙনের গতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চরইচলি, শংকরদহ গ্রামের বাসিন্দা আয়নাল ও সবুজ বলেন, ‘তিস্তা নদীর ভাঙন হুমকিতে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে রাস্তায় বসবাস করছি। গত কয়েক দিনের ভাঙনে বিলিন হয়েছে অনক বাড়িঘর।
রংপুরে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোন্নাফ মিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরে তিস্তার ভাঙনের শিকার হয়েছে এই এলাকার মানুষ। তিস্তার ভাঙন রোধ করার দাবি এখন সবার।
প্রতিদিন নদী ভাঙতে ভাঙতে তিস্তা আমাদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন প্রধান সড়ক থেকে মাত্র আধাকিলোমিটারের কাছে চলে এসেছে তিস্তা।এর আগে উজানে বৃষ্টির পানি বৃদ্ধির ফলে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পরে। আবার পানি কমতে শুরু করায় ভাঙনের হুমকিতে পড়তে পারে প্রধান সড়কটি।
উপজেলার বাঘেরহাট গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, তিস্তা নদীর ভাঙনে ভিটামাটি বিলীন হয়েছে কয়েক শ পরিবার। ভাঙনে সব বিলীন হয়ে গেছে তাদের। বাড়িঘর, ফসলি জমিগুলাও নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। গত এক মাসেও সরকারি কোনো লোকজনের দেখা পাওয়া যায়নি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, নদীর পানি কমতে শুরু করায় অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। তবে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। তবে পানির গতি কমে যাওয়ায় অনেক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।